গোয়েন্দা সিরিজ : অপারেশন, ডাবল টার্গেট
লিখেছেন লিখেছেন আমীর আজম ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:০৪:৫৮ রাত
নিজেদের ওয়েবসাইটে নিউজটা আপডেট করে উঠে দাড়াল জেনারেল শ্যারন। ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা হাসাদের জেনারেল ডিরেক্টর। পাশে দাড়িয়ে আছে টিম বার্গম্যান। এই অপারেশনের চিফ কমান্ডার।
.
জেনারেল শ্যারন পিঠ চাপড়ে দিলেন টিম বার্গম্যানের। বললেন :
- ওয়েলডান ইয়ংম্যান। অপারেশনের সফল সমাপ্তির জন্য তুমি অবশ্যই একটা পুরস্কার পাবে।
- ধন্যবাদ স্যার।
- গত এক বছর অনেক পরিশ্রম করেছ তুমি। এখন তোমার ছুটি। পুরো একটা সপ্তাহ নিজের মত করে কাটাও। আর ছুটির পর জয়েন করবে এফবিআই তে। তোমার নতুন জয়েনের ব্যাপারে সবকিছুই রেডি করা আছে।
- এটা অসাধারণ একটা পুরস্কার আমার জন্য । অনেক ধন্যবাদ স্যার।
...............................................
এক সপ্তাহ আগের কথা।
.
একটা বিশাল হলরুম। সিক্রেট মিটিং চলছে। সামনে বসে আছেন চিফ কমান্ডার টিম বার্গম্যান। তার সামনে উপবিষ্ট বিশ সদস্যের একটা টিম। গম্ভীর ভরাট কন্ঠে তার বক্তৃতা শুরু করলেন টিম বার্গম্যান :
- ইসরাইলের সূর্য সন্তানেরা। আপনারা অবগত আছেন এই বছরের শুরুতে বিশেষ একটা দায়িত্ব দিয়ে আপনাদেরকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছিল। আজকে সেগুলোর ফিডব্যাক নেয়ার জন্যই মূলত এই মিটিং। আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আপনাদের কাজের অগ্রগতির উপর নির্ভর করছে নেক্সট অপারেশনের পরিকল্পনা। ব্রীফ করুন প্লিজ।
.
একজন উঠে দাড়াল। নাম দানিয়েল ডেভিড। টিম লিডার। ব্রীফ করা শুরু করল :
- স্যার আপনি জানেন আমরা পাঁচ জন করে চারটা টিমে ভাগ হয়েছিলাম। উদ্দেশ্য চারটা বড় শহর কাভার করা। নিউইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস আর ওয়াশিংটন।
- " এসব আমার জানা আছে। " বলল টিম বার্গম্যান " এরপর কি করলেন সেটা বলেন "।
- আমরা টার্গেট সিলেকশনের ব্যাপারে খুব সিনসিয়ার ছিলাম স্যার।
- কি রকম।!!
- আমাদের টার্গেটে ছিল এমন কিছু মুসলিম তরুণ যাদের ইসলামের জ্ঞান কম কিন্তু আবেগ আছে। তাদের আবেগটাকে কাজে লাগানোই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য।
- ভেরি গুড ডিসিশন। তারপর।
- আমাদের বিশ জন একজন করে টার্গেট নিয়ে বিশ জনের সাথে কমিউনিকেশন করেছি। এদের মধ্যে পনেরো জন বলা চলে জিহাদ করার জন্য মুখিয়ে আছে। বাকি পাঁচজন এখন পর্যন্ত প্রস্তুত না। তবে আশা করি হয়ে যাবে কিছু দিনের মধ্যে।
- কিভাবে সম্ভব হল এত কম সময়ের মধ্যে তাদেরকে প্রস্তুত করা ?
- আমাদেরকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয় নি স্যার। আমার মনে হয় মুসলিমরা এখন একটা বেকুব জাতিতে পরিণত হয়েছে। তাদেরকে মোটিভেট করার জন্য আমরা যে পরিমাণ কুরআন স্টাডি করি, তারা নিজেরা সেটুকুও করে না। জিহাদ সসম্পর্কিত কয়েকটা কুরআনের আয়াত, আর কয়েকটা হাদীস ব্যাখ্যা করে বলতেই তারা চোখের জল আর নাকের জল একাকার করে ফেলে। ভাবখানা এমন যেন কুরআন আর হাদীসে শুধু জিহাদই আছে, আর মানুষ মারার কথাই আছে, অন্য কোন বিষয় নাই। অথচ জিহাদ কথাটার সঠিক অর্থও তারা বোঝে না। জিহাদ ছাড়াও আরো হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি তাদের কোন মনোযোগই নেই। অর্থনীতি, সমাজজীবন, রাজনীতি, কূটনীতি এসব যেন ইসলামে অনুপস্থিত।
- এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা খুশির সংবাদ। ইসলামি শিক্ষা থেকে মুসলমাদের দূরে রাখার আমাদের যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা সেটা অনেকটাই এখন সফল।
- আমাদের পরবর্তী অপারেশন কোথায় স্যার ?
- ইউরোপ।
- ইউরোপ !! কিন্ত কোন মুসলিম দেশ বাদ দিয়ে ইউরোপ কেনো স্যার।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন কে একটা কঠিন শিক্ষা দেয়া দরকার। ইদানীং তারা খুবই বাড়াবাড়ি শুরু করছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট, ইসরাইলি পণ্য বন্ধের ঘোষণা। এসব আর সহ্য করা যায় না। তাদের এবার বুঝিয়ে দেয়া উচিৎ ইসরাইল কি জিনিস।
- কিন্তু স্যার, আমাদের মূল লক্ষ্য ?
- চিন্তা করো না। সেটাও অর্জিত হবে। এক ঢিলে দুই পাখি, হা : হা : হা :।
- ওকে স্যার। অপারেশনের ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা দরকার।
- হা। আসল কথায় আসি। এদের বিশ জনের মধ্যে দশজনকে আজই পাঠিয়ে দাও প্যারিসে। এক সপ্তাহ পর সেখানে দুইটা পাবলিক গেদারিং হবে। একটা কন্সার্ট, আরেকটা চ্যাম্পিয়নস লীগের ম্যাচ। যেখানেই সুযোগ হবে, সেখানেই তাদেরকে কাফের মারার জন্য কাজে লাগানো হবে।
- আর বাকিরা স্যার ?
- তারা রিজার্ভ থাকবে অন্য কোন অপারেশনের জন্য।
- ওকে স্যার। কিন্তু এই দশ জনের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত ? তারা যদি জীবিত ধরা পড়ে যায়।
- ভাল প্রশ্ন করেছ। এটাও চিন্তা করে রেখেছি। তুমি সহ তোমার টিমের চারজন কাল প্যারিসে যাচ্ছ। নকল নাম, পাসপোর্ট, ভিসা সব রেডি আছে। প্যারিসের পুলিশ হিসেবে জয়েন করবে তোমরা। যাদের যায়গায় জয়েন করছ তারা ছুটিতে যাবে টানা এক সপ্তাহের। এই দশজনের দফারফা করার দায়িত্ব তোমাদের। সাবধান একটাও যেনো জীবিত ধরা না পরে।
- ওকে স্যার।
- আর কারো কোন প্রশ্ন আছে ?
.
একজন উঠে দাড়াল। বলল :
- স্যার মিডিয়া কভারেজের কি অবস্থা ?
- কোন চিন্তা নেই। ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, ফ্রান্সের দ্য গল সহ বিশ্বের সব বড় বড় পত্রিকা এবং বিখ্যাত টিভি চ্যানেল গুলোতে আমাদের এজেন্টরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। শুধু অপারেশনটাই বাকি।
.
আরেকজন বলল :
- কিন্তু স্যার, এর দায়ভার মুসলমানদের উপর কিভাবে চাপাবেন ?
- প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আমাদের কয়েকজন পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিবে। তারা বলবে যে, তারা শুনেছে, আততায়ীরা বারবার বলতেছিল, "আফগানিস্তান ও ইরাকে মুসলমানদের উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ হিসেবে তোমাদেরকে মারা হচ্ছে। " আর তাছাড়া ওয়েবসাইট তো আছেই। আর কোন প্রশ্ন ?
-" না স্যার নেই।" বলল দানিয়েল ডেভিড।
- ওকে। তাহলে আজকের সিক্রেট মিটিং এখানেই সমাপ্ত। আমাদের পূণ্যভূমি ইসরাইল দীর্ঘজীবী হোক। জয় হোক ইসরাইলের সূর্য সন্তানদের।
.......................................
জেনারেল শ্যারন অফিসে তার চেয়ারে বসে আছে। চোখ তার সামনের দেয়ালে নিবদ্ধ। বিশ্বের সব বিখ্যাত টিভি চ্যানেল গুলো ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে। " প্যারিসে একটি কন্সার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৫০ জন নিহিত। হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে আইএস। "
.
পারসোনাল কম্পিউটার টার দিকে তাকাল জেনারেল শ্যারন। আবার পড়ল দশ মিনিট আগে নিজ হাতে টাইপ করা ওয়েবসাইটের লেখাগুলো। "প্যারিসের কাফের হত্যায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে আমাদের প্রিয় ভাইয়েরা। নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে তারা প্রমাণ করে গেল মুসলিম জাতি কখনো মাথা নত করে না। "
.
ওয়েবসাইটের শিরোনামে চোখ পড়ল জেনারেল শ্যারনের। দেখল বোল্ড হরফে খুব বড় করে লেখা আছে "ইসলামিক স্টেট ( আইএস) "। ক্রুর একটা হাসি ফুটে উঠল তার মুখে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন